গ্রন্থ সমালোচনা ভালোবাসা প্রীতিলতা - Sokalerkotha -->

Breaking News

গ্রন্থ সমালোচনা ভালোবাসা প্রীতিলতা


নিলয়:
আমিত সাহস আর অস্ত্রের ট্রিগার এ দুইয়ে মিলিত মোহনার নাম প্রীতিলতা। বীরকণ্যা প্রীতিলতা। প্রীতিলতা ছিলেন অগ্রসর নারীর মূর্ত প্রতিক।বীরকণ্যা প্রীতিলতা তার অমিত সাহসের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনতে চেয়েছিলেন গৌরবময় স্বাধীনতা । ধ্বংশ করতে চেয়েছিলেন ইউরোপীয়ান ক্লাব ছিনিয়ে আনতে চেয়েছেন বাংলার স্বাধীনতা। এ বিপ্লবী বীরকণ্যার বিপ্লবী মনোভাব ছোট্ট বেলায় থেকেই লক্ষনীয়। পূর্ণেন্দু দস্তিদার থেকে ক্ষুদিরামের বই হাতে পাওয়া প্রীতিলতার স্বদেশের প্রতি ভালবাসা শুরু। পূর্ণেন্দু দস্তিদারের মাধ্যমেই মাস্টার দা সূর্যসেন সাথে দেখা এরপরে ভারতীয় আর্মিতে যোগদান, যার অবসান ঘটেছে ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণে ব্রিটিসদের কাছে ধরা না দিয়ে পটাসিয়াম সাইনেট সেবনের মাধ্যমে আত্নহুতি দিয়ে ।ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে শহীদ হওয়া প্রথম নারী প্রীতিলতা। তরুণ প্রজন্মের কাছে আদর্শ এক বিপ্লবী নেত্রী একজন পথপ্রদর্শক ।

বিপ্লবী প্রীতিলতার জন্ম বঙ্গবঙ্গ রদের বছর ১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের পটিয়ায়। বাবা জগদ্বন্ধু এবং মা প্রতিভা দেবী। তেজস্বী প্রীতিলতার ডাক নাম ছিলো রাণী। বীরকণ্যা প্রীতিলতা সবার কাছে ভালবাসা এবং বিপ্লবের অনুপ্রেরণা । কথা সাহিত্যক সেলিনা হোসেনের ভালবাসা প্রীতিলতা গ্রন্থে বিপ্লবী প্রীতিকে যেনো রম্যময় রোমান্টিক প্রেমময় একজন চরিত্রের বাহক হিসেবে পেয়েছি। রামকৃষ্ণ আলীপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দী একজন ফাঁসির আসামী সেখানে ছদ্ম আত্নীয়ের বন্ধন দেখিয়ে প্রীতিলতার ৪০ বার রামকৃষ্ণের সাথে দেখা করা, মাস্টার দা সূর্য্যসেন ১৯৩২ সালের ২৪ই সেপ্টেম্বর ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণে প্রীতিকে দলপতী করা, এবং বীরকন্যা প্রীতিলতার মরদেহের জামার পকেট থেকে রামকৃষ্ণের ছবি পাওয়া এ ঘটনা গুলোকে কথা সাহিত্যক সেলিনা হোসেন প্রীতির স্টান্ড ধরে নিলেন যে প্রীতির আত্নহুতির একমাত্র অনুপ্রেরণা রামকৃষ্ণের প্রতি অগাধ ভালবাসা। যেখানে বীরকণ্যার প্রীতিলতার বিপ্লবী ইমেজকে খাটো করে দেখানো হয়েছে। একজন বিপ্লবীর কাছে তাঁর প্রেম ভালবাসা ও একটা বিপ্লব যার উদ্দেশ্য দেশ এবং জনগণের মুক্তি। কোন সাম্রাজ্যবাদের কাছে মাথানত কিংবা পরাধীনতার শিকলের আবদ্ধ থাকা নয়।সেলিনা হোসেন ভালবাসা প্রীতলিতা গ্রন্থে কিঞ্চিত বিপ্লবীভাব ক্ষুণ্ন করেছেন। যা তিনি স্বীকার ও করেছিলেন । [ভালবাসা প্রীতিলতা লেখার পূর্বে সেলিনা হোসেন "সত্যেনদার কাছে জানতে চেয়েছিলেন প্রীতিলতাকে নিয়ে একটা রোমান্টিক উপন্যাস লেখার। সত্যেনদা উত্তরে বলেছিলেন প্রীতিলতাকে নিয়ে প্রেমের উপন্যাস লিখলে প্রীতির বিপ্লবী ইমেজ ক্ষুণ্ণ হবে। অন্য দিকে রণেশদাস গুপ্ত বলেছিলেন প্রীতির রামকৃষ্ণের প্রতি প্রেম থাকলেও তাকে এভাবে লিখে প্রতিষ্টিত করার প্রয়োজন নেই।ভোরের কাগজ (মে৪,২০১৮) ]এখানে সেলিনা হোসেন থেমে গেলে হয়ত আমার আর এ সমালোচনায় আসতে হত না। সেলিনা হোসেন ভালবাসা প্রীতিলতা লিখার পূর্বেই পূর্ণেন্দু দস্তিদার এবং শংকর ঘোস নামে দুইজন লেখক বীরকণ্যা প্রীতিলতা নামে দুইটি গ্রন্থ লিখেন যেখানে প্রীতির বিপ্লবী ইমেজ লক্ষনীয়। এবং প্রীতিলতার সহযোদ্ধা কালিকিংর দে, বীরেশ্বর রায় এবং শান্তিসেনের লেখায় ও লক্ষ্য করা যায় প্রীতিলতার স্বদেশী প্রেম যার পুরোটা জীবনজুড়ে ছিলো শুধুই বিপ্লব। রামকৃষ্ণের প্রতি আত্নকেন্দ্রীক ভালবাসা তাদের লেখায় পাওয়া যায় নি। 

যা পেয়েছি সেলিনা হোসেনের গ্রন্থে । একজন মেধাবী ছাত্রী যে পড়াশুনা শেষ করে নন্দকানন উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন চাইলে ব্রিটিশদের পদলেহন করে তিনি আরাম আয়াশে জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন। তিনি কেনো ক্ষুদিরামের বই পড়ে ভাবনায় আনমনা থাকতেন ঝাশি রাণীর কাছ থেকে কেনো তিনি ব্রিটিশদের অত্যাচারের গল্প শুনে কেনো তিনি অবাক হতেন, কেনো প্রীতিলতা পূর্ণেন্দু দস্তিদারের সহযোগিতায় মাস্টারদা সূর্যসেনের সাথে দেখা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন, কেনো প্রতিলতা ভারতীয় আর্মি দলের সদস্য হতে চেয়েছেন, কেনো জালালাবাদ হামলার পরে অর্ধমৃত অর্ধেন্দু বন্ধী অবস্থায় ব্রিটিশ পুলিসেদের তোয়াক্কা না করে বলেছেন আমাকে শান্তিতে মরতে দাও, কেনো বার বার আলীপুর সেন্ট্রাল জেলে রামকৃষ্ণের সাথে দেখা করতে যেতেন, এবং সবশেষে ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের দলপতী হতে চেয়েছেন, কেনো তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কাছে হার না মেনে নিজের জীবনের ইতি টেনেছেন। এ সকল কেনোর উত্তর যদি আমরা খুঁজতে যায় তাহলে আমরা আবিষ্কার করবো এক তেজস্ক্রিয় বীর সাহসী নারীকে যার নাম প্রীতিলতা বীরকণ্যা প্রীতিলতা। একজন নারীর জীবনে প্রেম আসে কিন্তু একজন বিপ্লবীর জীবনে শুধুই সংগ্রাম বয় অন্যকিছু নয়৷ যা আমরা মাস্টার দা সূর্যসেনকে দেখলে বুঝতে পারি। প্রীলিতার সাথে রামকৃষ্ণের সম্পর্ক হয়ত প্রেমে ও রুপ নিতো যদি প্রীতি জীবিত থাকতো কিন্তু যেহেতু প্রীতিলতা নিজেকে আত্নহুতি দিয়েছেন শুধু ব্রিটিশদের কাছে ধরা দিবেন না বলে।এতেই প্রীতির অবস্থার সুস্পষ্ট৷ রামকৃষ্ণের সাথে প্রীতিলতার ভালবাসা থাকলেও সেটা নৈব্যক্তিক ভালবাসা। যা একজন বিপ্লবীর জীবনে মূখ্য হয়ে আসতে পারে না। সেলিনা হোসেনের মত সচেতন একজন লেখিকার কাছে প্রীতিলতার প্রকৃত বিপ্লবী রুপ আড়ালে রেখে বিকৃত একটি রুপ তুলে আনা এটি কোন ভাবেই কাম্য নই।


সম্প্রতি সেলিনা হোসেনের ভালবাসা প্রীতিলতা গ্রন্থ নিয়ে একটি সিনেমা নির্মিত হচ্ছে যেখানে হয়ত প্রীতিলতাকে সেলিনা হোসেনের কল্পিত চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হবে৷নতুন প্রজন্মের কাছে প্রীতিলতাকে পুস্পকাননের ন্যায় উপস্থাপিত করা হচ্ছে যা একজন বিপ্লবী হিসেবে মেনে নিতে আমার কষ্ট হচ্ছে৷ তরুণ প্রজন্মের কাছে প্রীতিলতা পরিচিত হবেন ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের প্রধান চরিত্র হিসেবে , প্রীতি পরিচিত হবেন স্বদেশের প্রতি ভালবাসার মূর্ত প্রতীক হিসেবে, নতুন প্রজন্ম জানবে অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সাহসী নারী হিসেবে৷ আমরা প্রীতিলতাকে খুব সচেতন ভাবে পাঠ করবো। বিপ্লবীদের সচেতন ভাবে পড়তে হয়। যেখানে অন্যায় যেখানে অভিচার সেখানে নেমে আসুক প্রীতিলতা। হাজারো প্রীতিলতা নেমে আসুক এ বাংলার বুকে।



No comments