হোমনা প্রাইভেট সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মায়ের পেটের বাচ্চাসহ প্রসূতির মৃত্যু - Sokalerkotha -->

Breaking News

হোমনা প্রাইভেট সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মায়ের পেটের বাচ্চাসহ প্রসূতির মৃত্যু

হোমনা( কুমিল্লা) প্রতিনিধি:

কুমিল্লা হোমনায় প্রাইভেট সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল অপারেশনে মাহমুদা আক্তার (৩৭) নামের এক প্রসুতি মায়ের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৃথিবীর আলো না দেখেই বাচ্চাটিও মায়ের পেটেই মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। সে হোমনা পৌর সভার লটিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ হাসপাতালে দফায় দফায় প্রসূতির মৃত্যু হলেও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পাড় পেয়ে যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেই নীরবে চিকিৎসার নামে ব্যবসা করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। গত শুক্রবার  বিকাল সাড়ে ৪ টার দিকে  ওই প্রস্তুতির পেটের ব্যাথা হলে পরিবারের লোকজন তাকে হোমনা প্রাইভেট সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। আল্ট্রা রিপোর্টে এমাসের ২০ তারিখে ভেলিভারি হওয়ার কথা ছিল বলে জানায় তার রেখে যাওয়া পরিবার। প্রসূতি মায়ের আরোও তিন সন্তান রয়েছে। দুই ছেলে ও এক মেয়ে তারা সবাই নরমাল ডেলিভারিতেই জন্ম গ্রহণ করে ছিল। তবে এবারের চার নম্বর সন্তান জন্ম দেওয়ারকালে তার সিজারের প্রয়োজন হয়। সিজার অপারেশন করার এক পর্যায়ে প্রসূতির অবস্থা গুরুতর খারাপ হয়ে গেলে হাসপাতালে কতৃপক্ষ পরিবারের লোকজনকে বলে রোগীর অবস্থা ভালো না ঢাকা নিতে হবে তখন বাজে সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিট।

এক পর্যায়ে এম্বুলেন্স করে প্রসূতিকে ঢাকার উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে রোগীকে বেডে শুয়ানোর পর পরই  অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রোগীর মৃত্যু হয়। চিকিৎসা দেওয়া আর সম্ভব হয়নি। তখন বাজে রাত আনুমানিক ১১:৩০ মিনিট। পারিবারিক  সূত্রে জানা গেছে. গত শুক্রবার গর্ভবতী মাহমুদার প্রসব বেদনা উঠলে এক দালালের মাধ্যমে তাকে  হোমনা হাসপাতাল রোডের " হোমনা সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কোন প্রকার প্রস্তুতি ছাড়াই মাহমুদাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ সময় ডা: দিলশাদ বেগম  ভুলে এসেসথেসিয়া দেয়া ছাড়াই  সিজার অপারেশন করার জন্য কাচি চালালে  রোগী চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।  পরবর্তীতে  অপারেশন সম্পন্ন না করে ক্ষতস্থান দায়সারা বেন্ডেস করে তড়িঘড়ি করে ঢাকায় রেফার করে। পরে  স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে  বড় অঙ্কের টাকায় রফাদফা করে সকাল ১১ টার দিকে জানাজা শেষে স্থানীয় কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়।  লোকজনের অভিযোগ  ডা: দিলশাদ বেগম নিদিষ্ট ক্লিনিকে চেম্বার করেনি।  উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চুক্তিতে সিজারিয়ান অপারেশন করে থাকেন। গত কাল শুক্রবার বিকালে ডাঃ দিলশাদ বেগম  কমিশনের লোভে রোগীকে  কোন রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে হাসপাতালে ভর্তি করায় এবং  প্রস্তুতি ছাড়াই অপারেশন শুরু করেন। পরে  রোগীর অবস্থা খারাপ হলে তড়িঘড়ি করে তাকে ঢাকায়  রেফার করেন। কিন্ত  অপরেশনের ক্ষতস্থানের রক্ত বন্ধ না হওয়ায়  অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রাস্তায়ই তার মৃত্যু হয়।

উল্লেখ্য ইতিপূর্বেও  হোমনা সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছিলো। এ নিয়ে  ভুল চিকিৎসায় ৪ জনের মৃত্যু হলো। জানাগেছে,  হোমনা সেন্ট্রাল হাসপাতালের কোন বৈধ কাগজপত্র বা লাইসেন্স নেই। এই হাসপাতালে মালিক পক্ষ নিজেদের মধ্যে শেয়ার নিয়েও বিচার মামলা চলছে হোমনা থানায়।

প্রশাসনের চোখের সামনে  এ হাসপাতালে একের পর একাধিক ঘটনা ঘটলেও রহস্যজনক কারনে পার পেয়ে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ডাঃ দিলশাদ বেগমের মুঠোফোনে ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া য়ায়। তবে হাসপাতালের পরিচালক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন,রোগীর আলগা দোষ ছিল। অপারেশন করার সময় রোগীর অবস্থা খারাপ হলে ডাঃ মেডাম তাকে  ঢাকায় রেফার করেন। পরে রাস্তার মাঝেই তার মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে রোগীর আত্মীয় স্বজনের কোন অভিযোগ নাই।

প্রসূতির স্বামীর চাচাতো বড় ভাই মোঃ হানিফ মিয়া বলেন আমাদের কোন অভিযোগ নেই। আমাদের লটিয়া গ্রামের মেয়র নজরুল ভাই বলেছেন রোগীরকে মাটি দিয়ে দেও পরবর্তীতে এই হাসপাতালে ব্যবস্থা আমরা নিবো। আমাদের মেয়র সাব যা করবেন সেটাই আমরা মেনে নিবো। এ বিষয়ে  উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আবদুছ ছালাম সিকদার জানান, আমি মাসিক সভায় বরুড়ায় আছি। কোন অভিযোগ পাইনি। তার পরেও তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) রুমন দে বলেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তার  সাথে কথা বলে  তদন্তপূর্বক এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

No comments