মশার ‘কামড়ের ভয়ে’ বক্তব্য ভুলে গেলেন - অর্থমন্ত্রী
সজিবুর রহমান (নায়েক): ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ বিস্তারের মধ্যে রোগটির জীবাণুবাহী এইডিস মশার ‘ কামড়ের ভয়ে ’ বক্তব্য ভুলে গেলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল । অবশ্য সভাপতি হিসেবে বক্তব্য শেষ করার পরপরই ভুলে যাওয়া সেই কথা মনে পড়ে তার । ‘ ক্ষমা চেয়ে ’ সেই বক্তব্য আবার দেন তিনি । মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের( এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ইএফডি মেশিনের( ইএফডিএমএস) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে । অনুষ্ঠান মঞ্চে অর্থমন্ত্রীর পেছনে দাঁড়িয়েছিলেন সাদা পোশাকের এক কর্মী । তার হাতে ছিল মশা মারার ব্যাট । মন্ত্রীর আশপাশে কোনো মশা আসছে কি না, সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখছিলেন তিনি । কোনো মশা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে সেটি মেরে ফেলছিলেন । এভাবে অনুষ্ঠান চলার সময় বেশ কয়েকটি মশা মারতে দেখা গেছে তাকে । অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে বক্তব্য শেষ করার পর অর্থমন্ত্রী আবার মাইক অন করে বলেন, “ বিনয়ের সাথে বলছি, বক্তব্য শেষ করার আগে আমার একটি লাইন বলার কথা ছিল বা একটি বিশেষ কথা বলার কথা ছিল । কিন্তু আমি মশার জন্য ওদিকে দৃষ্টি দিতে গিয়ে সেটা আমি ভুলে গেছি । আমি আপনাদের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি ।
এরপর তিনি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করতে গিয়ে যেন কারো ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে সেদিকে নজর দেওয়ার আহ্বান জানান । রাজস্ব আহরণ কীভাবে করতে হবে তার উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের একটি গল্প বলেন । এর আগে ২০১৯ সালেও ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল, সে বছর অর্থমন্ত্রী নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন । সেটাই ছিল অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালের প্রথম বছর । জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের দুদিন আগে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি । পরে বাজেট দিতে হাসপাতাল থেকে সরাসরি সংসদে যান অর্থমন্ত্রী, কিছুক্ষণ পর অসুস্থ হয়ে পড়লে তার হয়ে বাজেট উপস্থাপন করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী । ওই বছরের ২৫ জুন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “ ডেঙ্গুর যন্ত্রণা কী, আমি বুঝি । আল্লাহ যেন কারও ডেঙ্গু না দেয় । ” জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, “ আমার হয়েছিল, আমি বুঝি । এই বিপদ থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে । ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে । অন্যান্য দেশে কী হচ্ছে সেটাও দেখা উচিত । এইডিস মশা কামড়ালে জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিতে হবে ।
অগাস্ট রাজধানীতে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় তিনি বলেন, “ বয়স অনেক হয়েছে, কেউ আমাকে কাবু করতে পারেনি । একমাত্র ডেঙ্গু আমাকে কাবু করেছে । বাজেটের দুদিন আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছি । ৭ মিনিট আমার জ্ঞান ছিল না । ওই ৭ মিনিট কীভাবে কেটেছে, আমি তা মেলাতে পারি না । ” এ বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ১৯১ জনে, যা এযাবৎকালের সর্বোচ্চ । এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪৮৫ জনের । ডেঙ্গুতে এক বছরে এত মৃত্যু আর কখনও দেখেনি বাংলাদেশ । রাজস্ব আহরণ কীভাবে করতে হবে তার উদাহরণ দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “ ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুই যখন ওই দেশের প্রধানমন্ত্রীও । সেই সময় ওই দেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন জন ব্যাপটিস্ট কোলবার্ট । তিনি একটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন, যে আপনাদের সবাইকেই রাজস্ব আহরণ করতে হবে । “ রাজস্ব আহরণ( এভাবে) করবেন যেন রাজহাঁস থেকে প্লাক করবেন( পালক তুলবেন) । কিন্তু লক্ষ্য রাখবেন, রাজহাঁসটি যেন কোনোভাবেই ব্যথা না পায়, কষ্ট না পায় ।
দেশের রাজস্ব আহরণ কার্যক্রমেও সেই নীতি অনুসরণ করার আহবান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “ আমাদের সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে, আমরাও ট্যাক্স অর্জন করব, ট্যাক্স আদায় করব । কিন্তু যিনি ট্যাক্স দিচ্ছেন, তার ওপরে যেন প্রেশার না আসে । “ শুধু একজন দেবে অন্যরা দেবে না আমরা যেটা বারবার বলে আসছি যে, নেটটা( আওতা) বড় করতে হবে । ” এসময় অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “ এটা হাই টাইম আমাদের জন্য । ম্যানুয়ালি করতে গেলে যে প্রতিবন্ধকতা থাকে সেই প্রতিবন্ধকতা এখন থাকবে না । ” মন্ত্রী স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রাজস্ব আহরণ বড় আকারে উদ্বোধন করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, “ আপনারা শুরু করে দেন । শুরু করলে এটা রেলওয়ের মতো । রেলওয়ের বগি যদি একবার রাস্তার ওপরে উঠে যায়, তাহলে আর পেছনে থাকে না, সামনেই যায় । “ আমরা এখন যে জায়গায় এসেছি ইনশাআল্লাহ আমরাও আর পেছনে যাব না । ২০৪১ এর স্বপ্ন আমাদের পূরণ করতে হবে । “ রাজস্ব আদায় ধর্মীয় দায়িত্বের মতো উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ ধর্মীয় দায়িত্ব এই রকম যে, মানুষের জন্য কাজ কর, সমাজের জন্য কাজ কর । সমাজের প্রত্যেক মানুষকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাও । “ আমি মনে করি এনবিআর এর চেয়ারম্যান একজন সৎ মানুষ । তাকে আপনারা সহযোগিতা করবেন । ”
No comments