ইউনিভার্সিটির সার্কেল ও না বলা কিছু কথা - Sokalerkotha -->

Breaking News

ইউনিভার্সিটির সার্কেল ও না বলা কিছু কথা

 ইউনিভার্সিটির সার্কেল ও না বলা কিছু কথা-আবু হুরাইরা আতিক 



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ২০১৭ সালের ২৬ ডিসেম্বরে হলে উঠলাম। হলে উঠার পর দেখলাম প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখার জন্য লকার টাইপের কিছু ই নাই। তখন বড় ভাইয়েরা বলল নিউমার্কেট থেকে ট্রাংক কিনে নিতে।  দুপুরের দিকে ট্রাংক কিনতে যাচ্ছি।স্যার এ এফ রহমান হলের সামনে গিয়ে দেখলাম হাবিব নামের আরেকজন বন্ধুও যাচ্ছে ট্রাংক কিনতে নিউমার্কেটে। হাবিবের সাথে আরেকজন ছেলে।  দেখতে সুন্দর। গায়ে জিন্সের শার্ট। বয়সে মনে হলো আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সিনিয়র। 


উচ্চতা মাঝারি ধরনের চেয়ে সামান্য কম। নাম ফেরদৌস প্রামাণিক। আমি ভেবেছিলাম হয়তো হিন্দু।  কিন্তু ফেরদৌস সংযুক্ত থাকায় সাহস করে কিছু বলতে পারলাম না। তখন তিনজনে গেলাম নিউমার্কেটে। গিয়ে ট্রাংক দামাদামি করা শুরু করলাম। দুইটা ট্রাংক আকাশী রংয়ের প্রলেপ আর একটা সাদা। তো সাদা টা কেউ ই পছন্দ করছে না। হাবিব এক প্রকার চতুরতা করে আকাশি একটা নিয়েই ফেলল।  বাকি একটা সাদা একটা আকাশী রংয়ের।  আমারও আকাশী রংয়ের টা পছন্দ। কিন্তু সেটা মুখে বলিনি। যখন কে কোনটা নিবে বলা হলো তখন আমার মনের অজান্তেই বলে ফেলাম আকাশী রংয়ের টা আমি নেব। সত্যি বলতে কি একজন পাগলও নিজের স্বার্থ রক্ষায় তৎপর।  যে কেউ ই আকাশীটা ই পছন্দ করবে। আমার চাহনিতে ফেরদৌস বুঝে ফেলল আমি আকাশী রংয়ের টা ছাড়া নিবো না। তড়িঘড়ি করে ফেরদৌস বলল আচ্ছা ঠিক আছে তোরা আকাশী রংয়ের গুলো ই নিয়ে নে। আমি সাদা রংয়ের টা নিচ্ছি। এই যে অপরিচিত জনের প্রতি তার সেক্রিফাইজিং মানসিকতা দেখায় তার প্রতি আমার ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। 


সময় গড়ায় আমাদের সখ্যতাও বাড়তে থাকে। কোন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া, বাহিরে কিছু খেতে যাওয়া,  কোন কিছু কিনতে যাওয়া, কোন বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করার একমাত্র বন্ধু হয়ে ওঠে সে। ডিপার্টমেন্টে ক্লাস করতে যেতাম দুজনে পাশাপাশি বসতাম। কোন কারণে একজনে না গেলে আরেকজন প্রক্সি দিয়ে দিতাম। এর মধ্যে একটি মেয়ের আন্তরিকতা দেখে মুগ্ধ হই। বাসা কুমিল্লা জেলায়। উচ্চতায় বেঁটে, গায়ের রং আমার মতো শ্যামলা। নেতৃত্ব গুণাবলি বেশ ভালো।  আমাদের অনু সঙ্গী হয়ে ওঠে সেও। এদিকে ফেরদৌস প্রামাণিকের ভর্তির দিন পরিচিত হওয়া হৃদয় সাহা, যার বাবা মা ফেরদৌসকে অত্যন্ত পছন্দ করে তার সাথে মেশার, চলার, ক্লাস করার বিষয়ে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। হৃদয় সাহা আমার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অন্যত্তম রহস্যময় চরিত্র।  শেরপুর জেলার আচারনিষ্ঠ হিন্দু পরিবারে জন্ম তার। বাবা মা দুজনেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন। বাবা ইতিহাস বিভাগ এবং মা দর্শন বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে বিয়ে করেছেন।  


মা এখন একটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত এবং বাবা ব্যবসায়ী। অর্থাৎ সে উচ্চবৃত্ত পরিবারের মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ৪০০+ মেধা তালিকায় থেকেও কেন ইসলামের ইতিহাস সংস্কৃতি বিভাগে তার বাবা মা তাকে ভর্তি করিয়েছিলেন আমি তার সদুত্তর আজও পাইনি। ভর্তি করিয়েছিলেন শব্দটি এ জন্য ব্যবহার করছি যে, ২য় বর্ষ পর্যন্ত কোন নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল না। সে বিষয়ে আবার আসবো। তো,হৃদয় সাহার মতো নিতেশ চাকমাও ইসলামের ইতিহাস সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হওয়ায় আমাদের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে।  সেই সময়ে রিমি নামক একজন বান্ধবীর সাথে পরিচয় হয় আমাদের। বাসা যশোর। সুন্দর গান গায়। মাশাল্লাহ প্রভু তারে কণ্ঠে দিয়েছেন মধুর সুর তাই চোখে দেখার ক্ষমতা দিয়েছেন অনেক কম। আমাদের সাথে ঘুরতে ফিরতে,চলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত।  


এতোদিনেয় বুঝতে পারলাম যে আমাদের মতো এরকম ডিপার্টমেন্টের অন্যন্য বন্ধুরাও একসাথে ঘুরতে,খেতে,কিনতে বের হয়। এটারই সার্বজনীন নাম ফ্রেন্ড সার্কেল।যাইহোক,আমাদের এই সার্কেলের একেক জনের বাসা একেক বিভাগে। শুধু আমার আর ফেরদৌস প্রামাণিক এর বাসা এক বিভাগে। এক পূজার ছুটি পেলাম ১৩ দিনের মতো। ফেরদৌস প্রামাণিক বলল চল রংপুরে যাবো। ১০ অক্টোবর ২০১৮ আমরা ট্রেনে সারা রাত জার্নি করে রংপুরে গেলাম। একজন বিশেষ মানুষের সাথে সাক্ষাৎ ঘটে। সে প্রসঙ্গে অন্যদিন বলবো। ফেরদৌস প্রামাণিকের বাসা হয়ে আসলাম আমাদের ফুলছড়ির বাসায়৷ আমার বাসায় ৩/৫ দিন থেকে চলে আসলাম ময়মনসিংহ।  


ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা হলে উঠলাম। আমাদের ইচ্ছা ছিল হৃদয় সাহাকে সাথে নিয়ে শেরপুরের পাহাড় বেড়াতে যাবো। কোন এক কারণে যাওয়া হলো না। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম রাতের ট্রেনে ঢাকা চলে যাবো। তো দুপুর বেলায় ফেরদৌস প্রামাণিক দ্বাদশ প্রলয়( আমাদের ইসলামের ইতিহাস সংস্কৃতি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের গ্রুপ) গ্রুপে মেসেজ দিলো যে কেউ ময়মনসিংহে থাকলে দেখা করতে পারেন৷  একজন রিপ্লাই দিলো আমার বাসা এখানেই চলে এসো। আমাদের যাওয়ার কোন শখ ছিল না। কিন্তু মেয়েটির আন্তরিকতা ও সাহস দেখে যেতে বাধ্য হলাম। তখনও আমরা সেই মেয়েটিকে দেখিনি। কেননা, আমি আর ফেরদৌস প্রামাণিক দুজনেই এ সেকশনের ছিলাম।  

আমরা বিকেলের দিকে রওনা হলাম দাওয়াত করা সেই বান্ধবীর বাসায়। রাত ৭ টার দিকে পৌঁছে গেলাম৷ রাস্তায় এসে তার ছোট ভাই আমাদের রিসিভ করলেন। আমাদের মনে ভয় উৎকন্ঠা ছিল।  কেননা মেয়েটির সঙ্গে কোন পরিচয় নেই। ফ্যামিলি বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিবে কি না। তো বাসায় পৌঁছে দেখলাম একটা মেয়ে আমাদের সালাম দিলো। আমরা জবাব দিয়ে ভালো মন্দ জিগালাম। আমরা ধরে নিয়েছি এটাই আমাদের বান্ধবী।  কিন্তু না কিচ্ছুক্ষণ পরে এসে আরেকজন মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো কিরে আসতে পারলা তোমরা! রাস্তা ভুলে যাওনি তো!! এবার বুঝতে পারলাম আগের মেয়েটি তার ছোটবোন। যাইহোক। মেয়ের মায়ের সাথে কথা হলো আমাদের। নিতান্তই সাধারণ পরিবার।  সব ভাইবোন পড়াশোনা করেন শুনলাম। তার বাবা অসুস্থ।  


আমরা দুজনে তার পাশে গিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করাতেই হাউমাউ করে কাদতে শুরু করলেন। আমাদের আথিতেয়তা করেছেন বেশ! মেয়ের ছোট বোন চা বানিয়েছিল শরবতের ন্যায়। এটা নিয়ে তাকে বহু মজা নেওয়া হয়েছে।  আমরা যখন বিদায় নিতে গেছি তার আব্বা একরকম কেঁদে বললেন বাবা আমরা গরীব মানুষ বলে আমার বাড়িতে থাকবা না!! আমরা পড়ে গেলাম মহাচিন্তায়। তাঁকে স্বান্তনা দিয়ে আমরা চলে আসলাম। এই মেয়েটির নাম শিরিন শিমা। ক্যাম্পাসে আসার পর আমাদের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে।  তুমি থেকে তুই ডাকে চলে আসে। সময় গড়ায় সম্পর্কের গভীরতা বাড়ে। এ সম্পর্কে কিছু কথা কখনোই বলা যায় না। আমাদের সার্কেল তখন ৭ জনে পৌঁছে।  ফেরদৌস প্রামাণিক, আবু হুরাইরা আতিক, হৃদয় সাহা,  নিতেশ চাকমা, সালমা আক্তার, আমরিন নাহার রিমি ও শিরিন শিমু। করোনার পূর্ব পর্যন্ত সার্কেল ঠিক ছিল। করোনার আগে হঠাৎ রাত ১ টার দিকে হৃদয় সাহা কল দিলো বলল আতিক তুই ভালো আছিস? আমি বললাম হ্যা, আলহামদুলিল্লাহ। তুই? বলল আমি ভালো আছি। আচ্ছা রাখি। কেটে দিয়ে ১ মিনিট পরে আবার কল দিয়ে সেইন কুয়েশ্চন।  আমিি তাই উত্তর দিলাম। এভাবে যখন ৭/৯ বার কুয়েশ্চন করছে তখন মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল।  বকা দিলাম। একটু পর ফেরদৌস প্রামাণিক বলল হৃদয় সাহা অসুস্থ দ্রুত খোঁজ খবর নি, আমি ক্যাম্পাসের বাহিরে আছি। গিয়ে দেখা করবো। দ্রুত চলে গেলাম জগন্নাথ হলে গিয়ে দেখি আবার আমাকেই কল দিচ্ছে! আমি মাথায় পানি দেওয়ার  ব্যবস্থা করলাম আর আন্টিকে কল করলাম। 


তখন আমাদের সেকেন্ড সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা চলে। একটা কোর্স পরীক্ষা দিতে পেরেছিল আর দিতে পারেনি৷ টাইফয়েড জ্বর মাথা দিয়ে নামছে। সে রীতিমতো পাগলের মতো আচরণ করতো। আংকেল আন্টি নিয়ে গেলো। ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার কথা।  পরে মিরপুরে একজন চিকিৎসক তার চিকিৎসা করালেন৷ ইতোমধ্যে যা ঘটার তা ঘটে গেল। ডিপার্টমেন্টে সেকেন্ড একটা ছেলে ইয়ার ড্রপ খেল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন অধরা এবং চিরজীবনের জন্য স্বপ্নই রয়ে গেল। জুনিয়রদের সাথে ক্লাস করা শুরু করলো আর আমাদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করল। করোনার মধ্যে হঠাৎ একদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চের একটি পোস্টে নজর কাড়ল! আমাদের সার্কেলের শিরিন শিমুর পোস্ট।  বিয়ে করেছে এখন ডিভোর্স চায়! নিরাপত্তা মঞ্চের সহযোগিতা চায়। চোখ কপালে উঠে গেল! এসব কি দেখলাম৷ ঘটনার সত্যতা তাকে জিজ্ঞেস করা হয়নি৷ পরে দেখলাম বিষয়টি মিটমাট হয়েছে। সংসারে ফিরে গেছে।  একটি মেয়ে বাচ্চাও হয়েছে।  রিমিও বিয়ে করেছে বাচ্চাও হয়েছে। মোটামুটি সবাই সংসার গুছানোর চেষ্টা করছে বিয়ে করে। এদিকে নিতেশ তার হলের সার্কেল নিয়ে থাকে। শুধু পড়ে আছি আমি আর ফেরদৌস প্রামাণিক। আমাদের দুজনের মধ্যেও ঝামেলা হয়েছে বিরাট। প্রায় ৬ মাস কথাবার্তা অফ রেখেছিলাম।  

কিন্তু পরে ঠিক করে নিয়েছি দুজনেই। থার্ড ইয়ারে গিয়ে এ সেকশনের সিআর হয়ে যায়। তার তখন শুধু আমাদের সাথে সম্পর্ক রাখলে চলে না। সে হয়ে ওঠে সার্বজনীন।  ফলে আমাদের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়। তবে আমি আমার জায়গা থেকে তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার মনোভাব দেখিয়েছি। কেননা একজন সিআরের অনেক বেশি দায়িত্ব থাকে। আমি যখন সরকারি আজিজুল হক কলেজে এইচএসসি পড়েছি তখন ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সিআরশীপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিন্তু ভাগ্যের নির্মম ইতিহাস এই যে সিআর নির্বাচনে জিততে পারিনি। তবে যদি সুযোগ পাই তাহলে মাস্টার্সে সিআরশীপ নেওয়ার ইচ্ছা আছে। এ জন্য যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে এটিই একমাত্র অপূর্ণতা বলে মনে হয় আমার কাছে।  অনেক জায়গায়,অনেক সংগঠনেই নেতৃত্ব দিয়েছি। অথচ, এই দায়িত্বটি পালনে আমার বন্ধুরা কেন আমাকে অযোগ্য মনে করলো সেই প্রশ্নের উত্তর আমি আজও পাইনি। ওহ হ্যা, আজও সবার সাথে দেখা হয়,সাক্ষাৎ হয় কিন্তু কোথায় যেন সেই সমুদ্রের মধ্যে লুপ্ত থাকা সাগরদেশীয় সর্বনাশী পাথর যেখানে ধাক্কা লেগে আমাদের সার্কেলটির অস্তিত্ব হাডিয়ে ফেলেছি তার সন্ধান করি। সন্ধান আমি / আমরা পাইনি তা নয়। কিন্তু শত বছরের শত কোলাহলের মধ্যেও ব্যক্তি গর্বকে উৎসর্গ করতে পাইনা। ফলে মনের সাথে মানসিকতা কিংবা মনের সাথে মনের,কিংবা হৃদয়ের সাথে গড়া হৃদয়ের বিন্দু দিয়ে গড়া বন্ধুত্ব চোখের পলকে ই হারিয়ে যেতে দেখি। দেখে কাতর হই কিন্তু আমিত্বকে বিলীন হতে দেইনা। 


নাতিদীর্ঘ এই পোস্টটি লেখার উদ্দেশ্য হচ্ছে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের এসে আমরা হারিয়ে ফেলেছি আমাদের সেই চিরচেনা গ্রুপ। আজও আড্ডা হয়, রাত বিরাতে চিল্লানোর সুরে গান হয়, মামুন বিরিয়ানি, মামা হোটেল, ঝিনুক রেস্তোরাঁয় আজও খাওয়া হয়। শুধু সেই বাগানের মালি নেই। সেই শূন্যস্থানে নতুন,ফুল কুড়ি স্থান করে নিয়েছে। প্রকৃতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রকৃতি শূন্যস্থান পছন্দ করে না। সেখানে তো আমরা মানুষ।  


বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে এমন সার্কেল হবে জানতাম না। মনে করেছিলাম এখানে সবাই সবাইকে চিনবে জানবে।কিন্তু না অদ্ভুত এক সিস্টেমে আমরা হাতে গোনা কয়েকজনে পরিচিত হয়ে উঠি। আর বাকি সবটুকু হয়ে ওঠে সাহারা মরুভূমি অথবা অন্ধকারাচ্ছন্ন আফ্রিকা মহাদেশ। যাকে কেউ ই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। 

শুধু ডিপার্টমেন্ট ই নয়। সার্কেলের বড় বৈষম্যের জায়গা হলো হল। এই যে প্রতি বছর একটা রুমে ৩০-৫০ জন শিক্ষার্থীদের একত্রে গনরুমে রাখা হয়৷ এর উদ্দেশ্য কী? এর জবাব হলো সার্কেল তৈরি করা। একটা হলের মধ্যে যতগুলো বন্ধ  আছে তাদের একটা ইউনিটি হবে। সকলেই সকলের দুঃখে কাঁদবে, কারে আনন্দে সকলেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করব। কিন্তু সত্যি কী তা হয়! অন্তত ৫ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি হয় না৷ এখানে সবচেয়ে বড় করে দেখা হয় রাজনৈতিক স্বার্থ।  যতদিন তা প্রয়োজন থাকে ততদিন টিকে থাকে।  অনার্স থার্ড ইয়ার বা ফাইনাল ইয়ারে গিয়ে কিছু ই থাকে না। বন্ধুদের সাথে দেখা হলে বড় জোর কি রে কেমন আছিস- জবাবে ভালো। তুই? এর চেয়ে আন্তরিকতা বা ঘনিষ্ঠতা খুজে পাওয়া যায় না। নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কিছু সার্বজনীন উপকারিতা আছে সেটা স্বীকার করি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বলতে যা বোঝায় তা আসলেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত হয়েছে বলে আমি মনে করিনা। বিশেষত হলে ব্যক্তি, ডিপার্টমেন্ট মেধা, যোগ্যতা যাচাই না করে বেশির ভাগ মানুষকে ই এই প্রশ্ন করতে দেখছি যে বাসা কোন জেলায়! সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে নিজ জেলার বাহিরে গিয়ে নিজেকে সার্বজনীন মানুষ হিসেবে নিজের পডিচয় তুলে ধরার প্রয়াস আমি খুব কম মানুষকে ই দেখেছি। 


লেখক : আবু হুরাইরা আতিক 


No comments