-->

Breaking News

কুমিল্লায় রাখি বন্ধন উৎসব পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভাই-বোনের সম্পর্ককে মজবুত করতে রাখইর থালায় রাখি, মিষ্টি, প্রদীপ, সিঁদুর, লাল সুতো, ধান ও দূর্বা দিয়ে সাজিয়ে বাঙালি হিন্দুদের শ্রেষ্ঠ সামাজিক অনুষ্ঠান রাখি বন্ধন উৎসব পালিত হয়। বুধবার (৩০ আগস্ট ২০২৩) সন্ধ্যায় সারা দেশের ন্যায় কুমিল্লা জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন বাসা-বাড়ীতে এ উৎসবটি পালিত হয়। জানা যায়- রাখি বন্ধন বা রাখি পূর্ণিমা উৎসবটি ভাই-বোনদের পবিত্র সম্পর্কের এক নিবিড় উদযাপন। তবে বর্তমানে শুধুই ভাই-বোনদের মধ্যে এই উৎসব সীমাবদ্ধ নেই। জাতি বর্ণ ধর্ম র্নিবিশেষে পারষ্পারিক সৌহার্দ্য-সৌভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধির জন্যেও রাখি পূর্ণিমা পালিত হয় থাকে। রাখি পূর্ণিমার ঠিক পাঁচদিন আগে ঝুলন পূর্ণিমা শুরু হয় এবং রাখি পূর্ণিমার সাতদিন পর জন্মাষ্টমী  উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর শ্রীকৃষ্ণের এই দুই লীলার মাঝে শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে রাখি পূর্ণিমা অনুষ্ঠিত হয় বলে এর আরেক নাম শ্রাবণী পূর্ণিমা। এই দিনটির জন্য প্রত্যেক ভাইবোন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। বোন ভাইয়ের হাতে রাখি পরিয়ে দেয় আর ভাই বোনকে রক্ষার অঙ্গীকার বদ্ধ হয়। এই ভাবেই এই অনুষ্ঠিত যুগের পর যুগ ধরে পালিত হয়ে আসছে। রাখি বন্ধন মূলত বিহারী সংস্কৃতি হলেও পরবর্তীকালে এই অনুষ্ঠান বাঙালি সংস্কৃতির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে পরে।
এদিকে, বুধবার সন্ধ্যায় কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুরীতেও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কুমিল্লা জেলা শাখার তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট তাপস চন্দ্র সরকার এর একমাত্র মেয়ে অর্পিতা সরকার এভাবেই রাখি বন্ধনের মাধ্যমে তাঁর ছোটভাই অরন্য সরকার প্রিন্সের দীর্ঘায়ু ও সৌভাগ্য কামনা করেন। তদ্রুপ ভাইও বোনের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। ঐদিন পরিবারের সকলে একত্রে মিলিত হয়ে বিশেষ খাবার দাবার ও উপহার এর ব্যবস্থা করা হয় এবং সকলে মিলে আনন্দ ফুর্তিতে মেতে ওঠে। এই বিশেষ দিনে পরিবেশে “যম” তত্ত্ব বেশি থাকে, এতে ভাইয়ের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে কিন্তু রাখি বন্ধনের ফলে তা দূর হয়ে যায়।

রাখি বন্ধনের নেপথ্যের ইতিহাস থেকে জানা যায়- সুদূর অতীতকাল থেকেই পুরুষদের বিপদ থেকে রক্ষা করার প্রতীক হিসেবে তাঁর কব্জিতে সুতো বেঁধে দিতেন মহিলারা। পুরাণ মতে- দেবতা ও রাক্ষসদের যুদ্ধে দেবতারা তখন প্রায় পরাজয়ের মুখে, দেবরাজ ইন্দ্র তখন তাঁর গুরু বৃহস্পতির সাহায্য চান। বৃহস্পতির পরামর্শ মতো শ্রাবণ পূর্ণিমায় ইন্দ্রের স্ত্রী সচী একটি মন্ত্রপূত রাখির ইন্দ্রের হাতে বেঁধে দেন। তারপরই যুদ্ধে জয়লাভ করেন দেবতারা। একবার কৃষ্ণের আঙুল কেটে গেলে দ্রোপদী তাঁর গায়ের কাপড় ছিঁড়ে তা বেঁধে দিয়েছিলেন কৃষ্ণের আঙুলে। বদলে কৃষ্ণ কথা দেন, যে কোনও বিপদেই তিনি দ্রৌপদীকে রক্ষা করবেন। শ্রাবণ মাসের এই শুভ পূর্ণিমা তিথিতে বোন ভাইয়ের হাতে রাখি বাঁধবে ভাইয়ের মঙ্গল কামনায়। রাখি বন্ধনের একটি শুভ মুহূর্ত প্রতি বছর থাকে। আর এই তিথির মধ্যে রাখি বন্ধনের একটা শুভ সময় থাকে। এই সময়ের মধ্যে রাখি বন্ধন করলে সেটি শুভ বলে মানা হয়। বাঙালিরা ভাই-বোনের সম্পর্ককে মজবুত করতে এই বিশেষ দিনের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। রাখি বন্ধনের এই পবিত্র দিনে বোন বা দিদিরা তাঁদের ভাইয়ের মঙ্গল কামনায়  হাতে রাখি বাঁধেন। রাখি বন্ধন হল ভাই ও বোনের মধ্যে এক প্রীতিবন্ধন আর শুধু তাই নয়, এই রাখি বন্ধন উৎসব এখন বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসার প্রতীক। রক্ষা বন্ধন উৎসবে ভাইবোনের মধ্যকার স্বর্গীয় সম্পর্ক উদযাপন করা হয়। বোনেরা তাদের ভাইদের হাতের কব্জিতে সুন্দর সুন্দর পবিত্র সূতা বেঁধে দেয় যা ‘নিরাপত্তা ও রক্ষা বন্ধন’ চিহ্ন হিসেবে প্রকাশিত। তারা তাদের ভাইদের মঙ্গল কামনা করে এবং ভাইয়েরা বোনদের রক্ষা করা প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। ঐ দিন পরিবারের সকলে একত্রে মিলিত হয়, বিশেষ খাবার দাবারের ও উপহারের ব্যবস্থা করা হয় এবং সকলে মিলে আনন্দ ফুর্তিতে মেতে ওঠে। এই বিশেষ দিনে পরিবেশে “যম” তত্ত্ব বেশি থাকে, এতে ভাইয়ের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে কিন্তু রাখি বন্ধনের ফলে তা দূর হয়ে যায়।

আরো জানা যায়- সুভদ্রা কৃষ্ণের ছোট বোন, কৃষ্ণ সুভদ্রাকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। তবে আপন বোন না হয়েও দ্রৌপদী ছিলেন কৃষ্ণের অতীব স্নেহভাজন। একদিন সুভদ্রা কিছুটা অভিমান ভরে কৃষ্ণকে প্রশ্ন করলেন এর কারন। উত্তরে কৃষ্ণ বললেন যথা সময়ে এর কারণ তুমি বুঝতে পারবে। এর কিছুদিন পর শ্রীকৃষ্ণের হাত কেটে রক্ত পড়ছিল, তা দেখে সুভদ্রা রক্ত বন্ধের জন্য কাপড় খুঁজছিলেন, কিন্তু মন মত পাতলা সাধারন কাপড় পাচ্ছিলেন না, এর মাঝে দ্রৌপদী সেখানে আসলেন, দেখে বিন্দুমাত্র দেরি না করে সাথে সাথে নিজের মুল্যবান রেশম শাড়ি ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাত বেধে দিলেন, কিছুক্ষন পর রক্তপাত বন্ধ হল। তখন শ্রীকৃষ্ণ বোন সুভদ্রাকে ডেকে বললেন এখন বুঝতে পেরেছ কেন আমি দ্রৌপদীকে এত স্নেহ করি? সুভদ্রা বুঝতে পারল ভক্তি ও পবিত্র ভালবাসা, শ্রদ্ধা কি জিনিস! দাদা কৃষ্ণের চেয়ে মুল্যবান বস্ত্র নিজের কাছে বেশি প্রিয় এটা ভেবে সুভদ্রা দারুন লজ্জিত হলেন। কোন বোন তার ভাইয়ের কোনোরূপ কষ্ট, অমঙ্গল সহ্য করতে পারে না। ভাইয়ের কষ্ট দূরের জন্য সে সর্বত্তম চেষ্টা করে। অন্যদিকে ভাই ও তার বোনকে পৃথিবীতে সর্বাধিক স্নেহ করে, সারাজীবন তাকে রক্ষা করে থাকে, যেরকম শ্রীকৃৃষ্ণ দ্রৌপদীকে রাজসভায় চরম কলঙ্ক থেকে রক্ষা করেছিলেন।

No comments