দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতারক চক্রের অফিস কক্ষ প্রতারণা বন্ধে সরকার কে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ - Sokalerkotha -->

Breaking News

দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতারক চক্রের অফিস কক্ষ প্রতারণা বন্ধে সরকার কে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ

তৌফিক সুলতান : ইউরোপ ওয়ার্ক পারমিট বা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে হচ্ছে প্রতারণা একটা অফিস, রেন্ডম ওয়েব সাইট, ফেইসবুক বুস্ট হলো তাদের পুঁজি। উত্তরা,মহাখালী, মিরপুর সহ ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে এই প্রতারক চক্রের অফিস কক্ষ। শুধু ইউরোপ-ই নয় অন্যান্য দেশে যেমন সৌদি, ডুবাই,মালোশিয়া বেশি বেতনে চাকরির কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছে বিদেশ যেতে আগ্রহী মানুষের টাকা-পয়সা। এই সকল এজেন্সির নেই সরকারি অনুমোদন, বিএমইটি বা বায়রা নিবন্ধন নেই আর,এল,নং কিংবা থাকলে ও ভুয়া। 

যাচাই করতে পারেন নিচে দেওয়া ওয়েবসাইট থেকে —

১।বিএমইটি : http://www.bmet.gov.bd

২।বায়রা : https://www.baira.org.bd

৩। সরকারি-আদেশ - প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় : https://probashi.gov.bd/


১।বিএমইটি হলো জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (BMET) ১৯৭৬ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক দেশের জনশক্তির প্রয়োজন মেটানোর সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে তৎকালীন জনশক্তি উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি সংযুক্ত বিভাগ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

২। বায়রা হলো বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা ও সমর্থিত জাতীয় পর্যায়ের একটি সংঘ। বায়রা অভিবাসীদের সহযোগিতা এবং কল্যাণের জন্যে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত।

কানাডা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপ —এর বিভিন্ন দেশ নিয়ে এমন প্রতারণা করছে শতশত এজেন্সি। মানুষ সুন্দর জীবন গড়ার জন্য নানাধরণের মাধ্যমে খুঁজে ইউরোপ যাওয়াটা অনেকের স্বপ্ন বিভিন্ন কারণে তাছাড়া যখন মানুষ জানতে পারে। ইউরোপ এর বিভিন্ন দেশে নিয়োগ হচ্ছে তখন অনেকেই যাওয়ার জন্য মারিয়া হয়ে উঠে।প্রতারক চক্র এই সুযোগ এটাকেই কাজে লাগায়া এই প্রতারণার অনেক ধরণের মাধ্যমে বা চাটূক্তি রয়েছে। যেমন আপনাকে ভিসার আগে কোনো টাকা দিতে হবে না। তারপর পুলিশ ক্লিয়ারেন্স আপনি চাইলে নিজে করতে পারেন তবে কোনো ঝামেলা হলে আপনার দ্বায়। মেডিকেল আপনি নিজে নিজে করতে পারেন তবে আমাদের মাধ্যমেও করতে পারেন মেডিক্যাল। জব এক্সপেরিয়েন্স সাটিফিকেট আপনি ম্যানজ করতে পারেন আমাদের মাধ্যমে করলে ২৫ হাজার টাকা লাগবে। আপনি করলে কোনো ঝামেলা হলে আমাদের কিছু করার নেই ইত্যাদি এমন অনেক কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে থাকে এইন প্রতারক চক্র গুলো এই ভাবেই হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। 

যদি কানাডার কথা বলি মনগড়া ভুয়া তথ্য দিয়ে কানাডায় ইমিগ্রেশনের নামে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে। এই চক্র গুলো ওয়ার্ক পারমিট, স্টুডেন্ট ভিসা, চাকরি পাইয়ে দেয়া বা ইমিগ্রেশন করিয়ে দেয়ার কথা বলে এরা সাধারণ মানুষকে প্রলুব্দ করে।

 বিদেশ যেতে ইচ্ছুক জনতাকে প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে ইমিগ্রেশন বিষয়ে সঠিত তথ্য তুলে ধরা জরুরি , ইমিগ্রেশনের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের আরও সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। গণমাধ্যমে ১ হাজার, ৫ লক্ষ্য, ২ লক্ষ্য লোক নিবে প্রচারণার পাশাপাশি তারা কিভাবে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে যেতে পারে এবং সরকার অনুমোদন কিছু এজেন্সির ঠিকানা উল্লেখ করে দেওয়া প্রয়োজন যেখান থেকে মানুষ প্রতারিত হবে না।

তাছাড়া এই বিষয়ে সরকার কেও কঠিন নজরদারি করতে হবে এবং প্রতারক চক্র গুলো কে আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির ব্যাবস্থা করতে হবে যেন অন্যন্য প্রতারক চক্র সাবধান হয়ে যায়।

কানাডা যেতে আগ্রহী সকলের প্রতি পরামর্শ,  কানাডায় ইমিগ্রেশনের যে কোনো তথ্যের জন্য কানাডা সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের (https://www.canada.ca/en/services/immigration-citizenship.html) ওপর নির্ভর করুন। একই সঙ্গে কানাডা সরকারের অনুমোদিত বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত নয় এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইমিগ্রেশন বিষয়ক কোনো সেবা না নেয়াই উত্তম।

সন্তানদের কানাডায় ভর্তি করা হলেই বাবা মা কানাডায় চলে এসে কাজ শুরু করতে পারেন এমনকি ইমিগ্রেশন পেয়ে যাবেন- এমন একটি কথা বাংলাদেশের প্রচার পেয়েছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য। বিদেশি শিক্ষার্থীরা কানাডায় পড়াশোনা শেষ করে নির্দিষ্ট শর্তাবলী পূরণ করা সাপেক্ষে ইমিগ্রেশনের জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থীর বাবা মা এসে কাজ করার জন্য ওয়ার্ক পারমিট পান না এই বিষয়ে বিভিন্ন নিউজ এর মাধ্যমে অবগত করা হচ্ছে।

তাই প্রতারক চক্রের প্রতাণায় পা বারা বেন না!

কানাডায় শিক্ষার্থী হিসেবে আসতে আগ্রহীদের আগেভাগে প্রয়োজনীয় হোমওয়ার্ক করে নেওয়া উচিৎ। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভর্তির বিভিন্ন নিয়মাবলী আছে, ভিসার জন্য আলাদা শর্তাবলী আছে। এগুলো সম্পর্কে যথাযথ উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ না করলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

ইউটিউব ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েট ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, ফেইসবুক বুস্টের মাধ্যমে প্রতারণ চক্র ওয়ার্ক পারমিট এবং কানাডায় কাজ পাইয়ে দেয়ার নামে প্রতারণা করে থাকে। মুল বিষয় হলো কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান চাইলেই বিদেশ থেকে কর্মী নিয়ে আসতে পারে না। কানাডায় পাওয়া যাচ্ছে না এটি প্রমাণ করতে পারার পরই সরকার বিদেশ থেকে লোক আনার অনুমতি দেয়। যা অনেক টা আমেরিকার EB3 ভিসার মতো বিষয়। কাজেই যারা ওয়ার্ক পারমিট দেয়ার কথা বলে বা ওয়ার্ক পারমিট পাইয়ে দেয়- তারা আসলে ভুয়া কাগজ দিয়ে প্রতারণা করে।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ করতে যাওয়ার সাথে অনেকে কানাডায় ইমিগ্রেশনকে মিলিয়ে ফেলেন। কোনো দালাল বা আইনজীবী, ইমিগ্রেশন কনসালট্যান্ট কাউকে কানাডায় ভিসা বা ইমিগ্রেশন করিয়ে দিতে পারে না- এটি অনেকেই বিবেচনায় রাখেন না। ফলে প্রতারণার সুযোগ তৈরি হয়।

কানাডয় ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতারণা এবং ভুল প্রচারণার বিরুদ্ধে আমাদের কথা বলতে হবে। মিডিয়াতে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ, প্রতারণা, এবং সঠিক দিকনির্দেশনা নিয়ে বিস্তৃত ভাবে কথা বলতে হবে।

বিশ্বায়নের এই যুগে তথ্য যাচাই বাচাই করা মোটেও কঠিন কোনো কাজ না। গণমাধ্যমের জন্য সেটি আরও সহজ। পত্রিকাগুলো এখন প্রবাস থেকে অনেক ফ্রিল্যান্সারদের লেখা প্রকাশ করে। সেই সব লেখার তথ্যের বিশেষ করে ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত লেখার তথ্যের যথার্থতা সম্পর্কে বাড়তি মনোযোগ না দিলে ইমিগ্রেশনকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রতারক চক্র সুবিধা নিতে পারে। 

কানাডা যাওয়ার বিষয়ে কিছু তথ্য জেনে নিন, ভিসা তথ্যের জন্য কানাডা সরকারের একটি ওয়েবসাইট আছে। সেখানে কানাডা ভিসা আবেদনের জন্য সব প্রয়োজনীয় তথ্য ও আবেদনের ফর্ম দেওয়া আছে। প্রতারণা ও জালিয়াতি থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই এ বিষয়ে কিছু না কিছু ধারণা বা জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

বাংলাদেশ হাজার হাজার ভিসা কনসালিং ফার্ম আছে। কিন্তু কোন ফার্মটি সঠিক কাজ করে সেটি খুঁজে বের করাও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। প্রতারণা বা জালিয়াতি থেকে বাঁচার প্রথম ও প্রধান উপায় হলো- যতদূর সম্ভব দালাল থেকে দূরে থাকা। কারণ দালালরা উচ্চ কমিশনের লোভে প্রায় সময় মিথ্যা কথা বলে। সুতরাং দালাল থেকে দূরে থাকুন। আর ভ্রাম্যমাণ কোন অফিস বা ব্যক্তি বা ভারচুয়াল কোন ব্যক্তি থেকে দূরে থাকুন।সরাসরি কোনো প্রতিষ্ঠান ভিজিট করুন। প্রধান কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলুন। প্রয়োজনীয় সম্ভাব্য বিষয়গুলো অনুমান করার চেষ্টা করুন। তাদের সফলতার হার ও চুক্তিবদ্ধ কোনো ইমিগ্রেশন লইয়ার বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে কিনা, তা নিশ্চিত ভাবে যাচাই করুন। প্রতিটি ধাপেই সতর্কতা অবলম্বন করুন।

কানাডার ভিসার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য জানতে বাংলাদেশে অবস্থিত কানাডার ভিসা ফ্যাসিলিটেশন সার্ভিসের কার্যালয়ে (কানাডা ভি.এফ.এস, ডেল্টা লাইফ টাওয়ার, ৪র্থ তলা, প্লট-৩৭, রোড নং-৯০, গুলশান-২, ঢাকা-১২১২) নিজ হাতে আবেদন বা ফাইল জমা দিতে হবে। ডেলিভারি স্লিপ বা জমা স্লিপ নিজের কাছে সংরক্ষণ করতে হবে। আবেদনপত্রে অবশ্যই নিজের ফোন নম্বর ও ই-মেইল ব্যবহার করতে হবে। পরে নিজেকেই ভি.এফ.এস থেকে ফাইল ডেলিভারি নিতে হবে। অর্থাৎ ফাইল জমা ও উঠানো দুটোই কাই আপনার নিজ হাতে করতে হবে। তাহলে আপনার পাসপোর্টে জাল ভিসা লাগানোর সুযোগ থাকবে না।

অনেকেই ভারত, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ইত্যাদি দেশ থেকে ভিসা করে দেওয়ার তথ্য দিয়ে থাকেন। এটি পুরোই ভিত্তিহীন। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই ও সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রীয় প্রসেসিং সেন্টার হলো সিঙ্গাপুর। অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিটি ভিসা কানাডা হাই কমিশন, সিঙ্গাপুর থেকে মূলত ইস্যু হয়ে থাকে। সুতরাং অন্য কোন দেশ থেকে কানাডার ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। অন্য কোন দেশে অবস্থিত কানাডার হাই কমিশন আবেদন গ্রহণ করবেন না। আপনাকে নিজের দেশে গিয়ে আবেদন করতে বলা হবে।প্রতারণার আরেকটি নাম ইলেকট্রনিক্স ভিসা। এই ভিসা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। এ ভিসা বাংলাদেশি পাসপোর্ট হোল্ডারদের জন্য প্রযোজ্য নয়। সুতরাং এ ভিসা করে কেউ প্রতারিত হবেন না।

এত সতর্কতা অবলম্বনের পরেও যদি সন্দেহ থেকে যায়, তবে কানাডা হাই কমিশন সিঙ্গাপুরের ই-মেইলে যোগাযোগ করতে পারেন। কানাডা হাই কমিশন সিঙ্গাপুর খুব সম্ভবত ২৪-৭২ ঘণ্টার মধ্যে ই-মেইলের জবাব দেবে। কানাডা ভিসা চেক করার সরাসরি কোনো মাধ্যম বা ওয়েবসাইট নেই। নিম্নে কমিশনের ঠিকানা দেওয়া হলো- কানাডা হাই কমিশন, সিঙ্গাপুর, ওয়ান জর্জ স্ট্রিট, ১১-০১, সিঙ্গাপুর-০৪৯১৪৫।

ই-মেইল: spore@international.gc.ca, ওয়েবসাইট: www.canadainternational.gc.ca

আপনাকে মনে রাখতে হবে , আপনার ভিসার জন্য আপনি নিজেই যথেষ্ট। কোনো কনসাল্টিং ফার্ম বা ব্যক্তি ভিসার মালিক নন। শুধু অ্যাম্বাসিই ভিসা দিতে পারে। কারো প্রলোভনে নয়, নিজে একটু ভাবুন। পরিবারের সাথে পরামর্শ করুন। প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করুন। সচেতনতাই প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে পারে।

কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি প্রতারক চক্র কে বিস্তার হতে দিয়েন না। প্রতারণা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা জরুরি।

No comments